মানবাধিকার-১: প্রথমে ধর্ষণ তারপর ভোগ


প্রথমে ধর্ষণ, তারপর নিয়মিত ভোগের জন্য বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভালোই দিন কাটছিলো ২৫ বছরের যুবক লোকমান হোসেনের। কিন্তু বাধ সাধলো কিশোরী মেয়েটির গর্ভধারণ। অবৈধ গর্ভপাত করাতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে শাস্তি থেকে রেহাই পেতে লোকমানের বন্ধু বাচ্চু ও রঞ্জন মিলে এক সালিশের ব্যবস্থা করে। সেখানে মেয়েকে বিয়ে করা এবং তাকে ১৫ শতক জমি লিখে দেয়ার মুচলেকা দিয়ে লোকমান থানা পুলিশ থেকে রেহাই পায়। পরে বিয়েও পড়ানো হয়। কিন্তু ওই মেয়েকে লোকমান আর ঘরে তুলে নেয়নি। তার ভরনপোষনের খরচও দিচ্ছে না। কেন সেকথা জিজ্ঞাসা করায় লোকমান সাংবাদিকদের জানিয়েছে, সময় হলে সবই হবে। এব্যাপারে ঈশ্বরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ‘মেয়ের একটি অভিযোগ আমার কাছে আছে। কিন্তু বিয়ের কাগজ ও মীমাংসার কাগজ জমা দেওয়ায় কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।’

আমার বক্তব্য: পত্রিকাতে মেয়ের বয়স উল্লেখ না করে কিশোরী লেখা হয়েছে। মেয়ের বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয় সেক্ষেত্রে তার বিয়ে পড়ানোটাই বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত যারা হবে আইন অনুযায়ী তাদের সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এরপর ধর্ষণের বিচার হওয়া দরকার। সবশেষে, ওই মেয়েটি যাতে আত্মহত্যা না করে মাথা উচুঁ করে বাঁচতে পারে সেলক্ষ্যে ধর্ষকের পরিবারের সম্পত্তি থেকে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ওই মেয়েকে দেয়া দরকার।

ধর্ষনের শিকার একটি মেয়েকে ধর্ষকের বাড়িতে বউ করে পাঠানোর মধ্যে আমি কোনো সমাধান খুঁজে পাই না। বরং আমার মনে হয় এই ধরনের অপরাধ যারা করে তাদের কাছে মেয়েটি আরো বেশি অবহেলিত হয়, যার খবর আমরা রাখি না। রাখতে পারি না।

আমি মনে করি, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা যদি কঠোর না হই। আমরা যদি মানবিক দিকগুলো না দেখি। আমরা যদি উদাহরণ সৃষ্টি না করি তবে অপরাধ দমন সম্ভব হবে না।

তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো। ২৭ জুন, ২০১০।

5 thoughts on “মানবাধিকার-১: প্রথমে ধর্ষণ তারপর ভোগ

  1. বিয়ে পড়ানো হয় অথচ তুলে নেই নাই? বাহ! বন্ধুরা মিলে আবার সালিশ ও করে? তাও আবার আরেক বন্ধুর অপকর্মের সালিশ? প্রথম কথা হছে ধর্ষক আবার বিয়ে করে কি ভাবে? তাকে ধরেতো সবার আগে জেলের ভাত খাওয়া দরকার।

  2. ধন্যবাদ পড়ার জন্য। আপনি বলেছেন ধর্ষক আবার বিয়ে করে কি করে? আসলে, সমাজপতিদের কাছে কবে ধর্ষণ করেছিলো সেটি এখন আর বিবেচ্য নয় তারা দেখছে পরবর্তী সময়ে মেয়েটি যে স্বইচ্ছায় ছেলেটির কাছে সমর্পিত হয়েছে।
    সমাজপতিরা বড়ই অদ্ভুত কাজ করে। তারা বিষয়টিকে দেখাতে চায় অবৈধ প্রেম হিসেবে। তারপর বলে, গরিব ঘরের মেয়ে যাবে কোথায়, তাছাড়া ওকে আর বিয়ে করবে কে? তারচেয়ে ওর একটা গতি তো হোক। অন্যরা সায় দেয়। বলে, হ্যা তাইতো। ধর্ষণের পর তো বলেনি। বিয়ের করবে বলেই তো বারবার মিলিত হয়েছে। প্রেম ছিলো। অতএব বিয়েই পড়িয়ে দাও। ওরকম একটি পরিস্থিতিতে মেয়েটার পরিবারও অসহায় বোধ করে। মেয়েকে নিয়ে পরে আবার কি করবে সেই প্রশ্নটিই তাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়। সমাজ মেয়েটির উপর ভীষণ চাপ তৈরি করে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বেশিরভাগ মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
    বড়ই প্যাচালো বিষয়। কিন্তু সিদ্ধান্তটি সরল। প্রথমত, মেয়েটির বয়স ১৮ নয়। অতএব আইন অনুযায়ী তার যৌনমিলনে সম্মতি দেয়ার সুযোগ নেই। বিয়ে হচ্ছে সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে স্বীকৃত পন্থায় একটি ছেলে ও মেয়ের যৌন ও পারিবারিক জীবনযাপনের অনুমতি। এখানে সেটি হওয়ার সুযোগ নেই। দ্বিতীয়ত, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। অতএব এর বিচার করতে হবে। তৃতীয়ত, সে যেন একজন মানুষের মর্যাদা নিয়ে সমাজে চলতে পারে সেই সুযোগ তৈরি করে দিতেই তাকে আয় করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
    সবচেয়ে বড় কথা সমাজের সচেতন মানুষগুলোকে এই ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে জনমত গড়ে তোলার কাজ করতে হবে। আসুন তথাকথিত সমাজপতিদের মনুষত্ব শেখাই!!!! মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করি।

beatified এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল