ঢাকায় বাড়ি খুঁজে দেওয়ার জন্য এজেন্ট আছে সেটা আমার জানা ছিলো না। অন্য দুইজন বিদেশীর সঙ্গী হয়ে আমিও গিয়েছিলাম এজেন্টের অফিসে। ঢাকার গুলশানে বড় সড় সাজানো অফিস। কয়েকটি রুম পেরিয়ে যখন অফিসের সিইও-র রুমে পৌঁছলাম ভালো লাগলো। বয়সে তরুণ এক সিইও। আদব কায়দা ভালো। ইংরেজিও বলে বিদেশীদের মতো। পোশাক পরিচ্ছদও অফিসিয়াল। সবমিলিয়ে আস্থা রাখার মতো। আমরা আশাবাদী হয়ে তার সঙ্গে আলাপ শুরু করলাম।
আমার সঙ্গের বিদেশীদের একজন প্রজেক্ট ডিরেক্টর। অন্যজন টিম লিডার। প্রজেক্ট ডিরেক্টর ভদ্রলোক ৭ দিনের জন্য এসেছেন। তিনি চলে যাবেন নিজের দেশে। বুলগেরিয়ায়। যাবার আগে তিনি অফিসের জন্য বাসা ভাড়া করে যেতে চান। অফিসের জন্য তিনি চাচ্ছেন একটি দুই কিংবা তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট। তার অফিসের রেগুলার স্টাফ হবে মাত্র তিনজন। সেকারণে খুব বড় বাসা তার দরকার নেই। কিন্তু তিনি ধারণা করছেন যে যেহেতু গুলশান, বনানী, বারিধারা কিংবা নিকেতনের মধ্যে তিনি অফিসের জন্য বাসা খুঁজছেন সেকারণে খুব ছোট বাড়িও তিনি পাবেন না। কারণ ইতোমধ্যে তিনি টু লেট দেখে দুয়েকটা বাড়ি নিজে দেখেছেন। আর একারণে তিনি তার চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে বাজেটের কথা বললেন। তিনি জানালেন যে, যদি এটা ফার্ণিশড বাড়ি হয় তবে তিনি শুরুতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা দিতে পারবেন। আর যদি খালি বাড়ি হয় তবে ভাড়া সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। তিনি আরো জানালেন যে, তিনি চান দিনের আলো বাড়িতে থাকবে। বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে। অফিসে কমপক্ষে ৪টি এসি লাগানোর অনুমতি থাকতে হবে। এরপর তিনি তার চাহিদাগুলোকে আবারো বললেন,
১. দুই কিংবা তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট।
২. এলাকাটা হতে হবে গুলশান, বনানী, বারিধারা কিংবা নিকেতন।
৩. বাসার মধ্যে দিনের আলো থাকবে। পরযাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে।
৪. কমপক্ষে ৪টি এসি লাগানোর ব্যবস্থা/অনুমতি থাকবে।
৫. গ্যাসের ব্যবস্থা না থাকলেও চলবে। কারণ তিনি শুনেছেন নতুন ফ্ল্যাটগুলোতে গ্যাস লাইন নেই।
৬. বাড়ি নতুন কিংবা পুরনোতে আপত্তি নেই। তবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
৭. ফার্ণিশড বাড়ি হলে ভাড়া সর্বোচ্চ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ৪টি এসিও থাকতে হবে।
৮. ফার্ণিশড না হলে ভাড়া সর্বোচ্চ ৬০ হাজার। যার মধ্যে সার্ভিস চার্জ থাকতে হবে।
৯. খোলামেলা বাড়ি নিচতলায় হলেও আপত্তি নেই।
১০. জেনারেটর থাকতেই হবে।
অন্যদিকে টিম লিডার বৃটিশ। বাংলাদেশে ছয়বছর থাকবেন। একাই থাকবেন। তিনি খুজছেন এমন একটি বাড়ি- ২টি কিংবা সর্বোচ্চ তিনটি বেডরুমের ফ্ল্যাট। বাসার মধ্যে প্রচুর আলোবাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভালো আবহাওয়ায় যেন দিনের বেলায় বাসার মধ্যে লাইট জ্বালাতে না হয়। সেরকারণে নিচতলায় নয়। বাড়ির অবস্থান হতে হবে গুলশান, বারিধারা কিংবা বনানী এলাকায়। ভাড়া ৬০ হাজার টাকার মধ্যে। তিনি আরো বললেন যে, একই বিল্ডিংয়ে আরো বিদেশী থাকলে ভালো।
এজেন্ট সব কিছু নোট নিলো। তারপর তার এক সহকর্মীকে ডেকে বুঝিয়ে দিলো। তাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা বাড়ি দেখতে বের হলাম।
প্রথম বাড়িটি আয়তনে অনেক বড়। ৩০০০ স্কোয়ার ফিট। দেয়ালের রং চটা। কোথাও কোথাও নোনায় ধরেছে। ফার্নিচারগুলোতে ধুলো জমে আছে। ভাড়া ১,১০,০০০ টাকা।
দ্বিতীয় বাড়িটি আয়তনে ২,৫০০ বর্গফুট। ফার্নিচারগুলোর কাপড় নোংরা। গণ্ধও আছে। ঘরের মেঝে দুনিয়ার ময়লা। দাগ পড়ে গেছে। ভাড়া ৯০,০০০ টাকা। আলো ছাড়া হাটার উপায় নেই।
তৃতীয় বাড়িটিতে ঢুকতেই পূতিগণ্ধময় মনে হলো! ফার্নিচারগুলোকে আধুনিক বলা যাবে না। কাঠের বড় বড় ঢাউস মার্কা ফার্নিচার। এটা কোনমতেই অফিস হতে পারে না! নিচে একটা জিম আছে!! ভাড়া ৯০,০০০ টাকা। বাজেটেও বেশি।
চতুর্থ বাড়িটি নিচতলায়। ঢুকতেই দেখা গেলো সারি সারি তোষক মেঝেতে। জানা গেলো একমাসের জন্য পাকিস্তানী একদল ব্যবসায়ী ভাড়া নিয়েছে। তারা এসেছে বাণিজ্য মেলায়। তাদের রান্না হচ্ছে সেই ঝাঝালো গণ্ধ আমাদেরকে বাধ্য করল দ্রুত বিদায় নিতে। ভাড়া ৯০,০০০ টাকা। দিনের বেলায় লাইট না জ্বালিয়ে এখানে থাকা যাবে না।
ততোক্ষণে আমাদের ধৈয্যের বাধ ভেঙ্গে গেছে। সময়ও চলে গেছে দেড় ঘণ্টা। আমরা এজেন্টের সহকর্মীকে বললাম আমাদের চাহিদা মোতাবেক যদি বাড়ি দেখানোর থাকে দেখাতে নতুবা দরকার নেই। এবার সে নিয়ে গেলো একটি বাড়িতে। দোতলায়। আলো বাতাস আছে। আগেরগুলোর চেয়ে ভালো। ভাড়াও ৭০,০০০ টাকা। কিন্তু এটা নাকি অফিসের জন্য ভাড়া হবে না!!
আমরা বুঝলাম এরা আমাদের জন্য সঠিক লোক নয়!!! তাকে আমরা বিদায় করে চলে এলাম।
সর্বশেষ অবস্থা: প্রজেক্ট ডিরেক্টর চলে গেছেন। টিম লিডার নিজের বাড়ি নিজেই খুঁজে নিয়েছেন। ৬০ হাজার টাকায় চমৎকার বাড়ি। কিন্তু অফিস এখনো পাওয়া যায়নি।
বাহ! ক্লাসিক 🙂
কিছু পাঠক থাকে সব লেখকের যারা হলো গিয়ে লক্ষ্মী পাঠক! রণ তুমি হলে গিয়ে আমার তেমন পাঠক!!
হাহাহাহাহাহাহ; বাড়ি ভাড়া নিতে গিয়ে অবদি আপনার কথা কেমন মিষ্টি হয়ে গেছে… 🙂